ট্রানজিস্টর বর্তনীর মৌলিক বিন্যাস ও তড়িতের প্রবাহ

একাদশ- দ্বাদশ শ্রেণি - পদার্থবিদ্যা - পদার্থবিজ্ঞান – ২য় পত্র | | NCTB BOOK

ট্রানজিস্টর বর্তনীর মৌলিক বিন্যাস

বর্তনীর প্রয়োজন অনুসারে তিন প্রকারের ট্রানজিস্টর বিন্যাস করা হয়।

১. সাধারণ পীঠ (common base) বিন্যাস : 

এই বিন্যাসে পীঠ ও সংগ্রাহক নিয়ে বহির্গামী এবং পীঠ ও নিঃসারক নিয়ে অন্তর্গামী প্রান্ত গঠিত হয়। উভয় প্রান্তের সাথে পীঠ সংযুক্ত থাকে বলে একে সাধারণ পীঠ বিন্যাস বলে (চিত্র ১০-২২)।

চিত্র :১০.২২

২. সাধারণ নিঃসারক (common emitter) বিন্যাস : 

এই বিন্যাসে নিঃসারক ও সংগ্রাহক নিয়ে বহির্গামী এবং নিঃসারক ও পীঠ নিয়ে অন্তর্গামী প্রান্ত গঠিত (চিত্র ১০:২৩)। উভয় প্রান্তের সাথে নিঃসারক সংযুক্ত থাকে বলে একে সাধারণ নিঃসারক বিন্যাস বলে।

চিত্র :১০.২৩

৩. সাধারণ সংগ্রাহক (common collector) বিন্যাস : 

 এই বিন্যাসে সংগ্রাহক ও নিঃসারক নিয়ে বহির্গামী এবং সংগ্রাহক ও পীঠ নিয়ে অন্তর্গামী প্রাস্ত গঠিত হয় (চিত্র ১০-২৪)। এ ক্ষেত্রে উভয় প্রান্তের সাথে সংগ্রাহক যুক্ত থাকে বলে একে সাধারণ সংগ্রাহক বিন্যাস বলে।

চিত্র :১০.২৪

ট্রানজিস্টরে তড়িতের প্রবাহ (Current Flow in Transistors)

চিত্র ১০-২৫-এ একটি npn ট্রানজিস্টর দেখানো হয়েছে যার নিঃসারক-পীঠ জংশনকে সম্মুখী এবং সংগ্রাহক-পীঠ জংশনকে বিমুখী বায়াস করা হয়েছে। সম্মুখী বায়াস - অঞ্চলের ইলেকট্রনগুলোকে পীঠের দিকে প্রবাহিত করে ফলে নিঃসরক প্রবাহ IE সৃষ্টি হয়। ইলেকট্রনগুলো p-টাইপ পীঠে প্রবেশ করার ফলে তারা সেখানকার হোল-এর সাথে মিলতে চায়। কিন্তু পীঠ খুব পাতলা হওয়ার কারণে সামান্য কিছু ইলেক্ট্রন (প্রায় 5%) হোল-এর সাথে মিলিত হয়ে খুব ক্ষুদ্র পীঠ প্রবাহ lB সৃষ্টি করে এবং বাকি ইলেক্ট্রনগুলো (প্রায় 95%) n-টাইপ সংগ্রাহক অঞ্চলে প্রবেশ করে এবং সংগ্রাহক প্রবাহ Ic সৃষ্টি করে। এভাবে প্রায় সম্পূর্ণ নিঃসারক

চিত্র :১০.২৫

প্রবাহ সংগ্রাহক বর্তনীতে প্রবাহিত হয়। সুতরাং দেখা যায় নিঃসরক প্রবাহ হচ্ছে সংগ্রাহক ও পীঠ প্রবাহের সমষ্টির সমান। অর্থাৎ

 lE=lB +lc…. (10.2)

চিত্র :১০.২৬

   (চিত্র ১০.২৬)-তে একটি pnp ট্রানজিস্টর দেখানো হয়েছে যার নিঃসারক পীঠ জংশনকে সম্মুখী এবং সংগ্রাহক পীঠ জংশনকে ৰিমুখী বায়াস করা হয়েছে। সম্মুখী বায়াসের ফলে p- টাইপ নিঃসারকের হোলগুলো পীঠের দিকে প্রবাহিত হয়ে নিঃসারক প্রবাহ IE তৈরি করে। হোলগুলো n-টাইপ পীঠে প্রবেশ করে সেখানকার ইলেকট্রনগুলোর সাথে মিলতে চায় । কিছু পীঠ খুব পাতলা হওয়ার কারণে সামান্য (প্রায় 5%) কিছু হোল ইলেকট্রনের সাথে মিলিত হয়ে খুব সামান্য পীঠ প্রবাহ lB তৈরি করে।

বাকি প্রায় 95% হোল p-টাইপ সংগ্রাহক অঞ্চলে প্রবেশ করে সংগ্রাহক প্রবাহ Ic তৈরি করে। এভাবে প্রায় সম্পূর্ণ নিঃসারক প্রবাহ সংগ্রাহক বর্তনীতে প্রবাহিত হয়। লক্ষণীয় যে, pnp ট্রানজিস্টরের ভিতরে তড়িৎ প্রবাহ হোল-এর প্রবাহের জন্য হয় কিন্তু বহিবর্তনীর সংযোগ তারের মধ্যে তড়িৎ প্রবাহ ইলেকট্রনের জন্যই হয়ে থাকে।   

    যদিও npn ও pnp ট্রানজিস্টরের কার্যনীতি একই রকম কিন্তু পার্থক্য এই যে, npn ট্রানজিস্টরে তড়িতের বাহক হলো প্রধানত ইলেকট্রন এবং pnp ট্রানজিস্টর তড়িতের বাহক হলো হোল ।

   আমরা জানি যে, ইলেকট্রন অধিক দ্রুত তড়িৎবাহক। তাই উচ্চ কম্পাঙ্কের বর্তনী বা কম্পিউটার বর্তনীতে npn ট্রানজিস্টর ব্যবহার করা হয়। এ সকল বর্তনীতে সিগনালের প্রতি অতি দ্রুত সাড়া দিতে হয়।

Content added || updated By

# বহুনির্বাচনী প্রশ্ন

মধ্যস্থ বারটি টাইপ হলে বর্তনীর প্রতীকে তীর চিহ্নটি বাইরের দিক নির্দেশ করে।
এতে রোধের তাপমাত্রা সহগ ঋণাত্বক
এর অন্তর্গামী এবং বর্হিগামী বর্তনীর পৃথকীকরণ নিম্ন তাপমাত্রায় করা যায়
এর ক্ষমতা লাভ উচ্চ

অ্যামপ্লিফায়ার

   যে যন্ত্র এর অন্তর্গামীতে প্রদত্ত সংকেত বহির্গামীতে বিবর্ধিত করে তাকে অ্যাম্পলিফায়ার বলে। ইলেকট্রনিক অ্যাম্পলিফায়ার দুর্বল অন্তর্গামী সংকেতকে বৃহৎ বহির্গামী সংকেতে পরিণত করে। ট্রানজিস্টর অ্যাম্পলিফায়ার হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ১০.২৭ চিত্রে একটি সাধারণ নিঃসারক বিবর্ধকের বর্তনী দেখানো হয়েছে। নিঃসারক-পীঠ জংশনে একটি দুর্বল অন্তর্গামী সংকেত প্রদান করা হয় এবং সংগ্রাহক বর্তনীতে সংযুক্ত রোধ RL থেকে বহির্গামী সংকেত গ্রহণ করা হয়। ভালো বিবর্ধন বা অ্যাম্পলিফিকেশন পাওয়ার জন্য অন্তর্গামী বর্তনীকে সর্বদা সম্মুখী বায়াস করা হয় এবং তা করার জন্য অন্তর্গামী বর্তনীতে অন্তর্গামী সংকেতের অতিরিক্ত একটি ডি.সি. ভোল্টেজ VBB প্রয়োগ করতে হয় যাকে বায়াস ভোল্টেজ বলে।

   সম্মুখী ঝোঁক দেওয়ায় অন্তর্গামী বর্তনীতে রোধ খুব কম হয়। নিঃসারক সংগ্রাহক বর্তনী অর্থাৎ বহির্গামী বর্তনীতে Vcc ব্যাটারির মাধ্যমে বিমুখী ঝোঁক প্রদান করা হয় ।

   নিঃসারক পীঠ জংশনে প্রযুক্ত সংকেতের ধনাত্মক অর্ধচক্রের সময় জংশনের সম্মুখ ঝোঁক বৃদ্ধি পায় ফলে অধিক পরিমাণ ইলেকট্রন নিঃসারক থেকে পীঠ-এর মধ্য দিয়ে সংগ্রাহকে প্রবাহিত হয় এবং সংগ্রাহক প্রবাহ বৃদ্ধি পায়। এই বেড়ে যাওয়া সংগ্রাহক প্রবাহ (Ic) লোড রেজিস্ট্যান্স RL-এ অধিক পরিমাণ বিভব পতন সৃষ্টি করে।

চিত্র :১০.২৭

  অর্থাৎ বহির্গামীতে অধিক ভোল্টেজ পাওয়া যায়। সংকেতের ঋণাত্মক অর্ধচক্রের জন্য নিঃসারক পীঠ জংশনের সম্মুখী ঝোঁক হ্রাস পায় ফলে সংগ্ৰাহক প্রবাহও কমে যায়। সংগ্রাহক প্রবাহ কমে যাওয়ায় বহির্গামী ভোল্টেজও হ্রাস পায় তবে তা' অন্তর্গামী থেকে বেশি হয়। এভাবে ট্রানজিস্টর কোনো দুর্বল সংকেতকে অ্যাম্পলিফাই বা বিবর্ধিত করে। 

 

   বাস্তবক্ষেত্রে বিবর্ধনের জন্য অনেকগুলো ট্রানজিস্টর ব্যবহার করা হয়ে থাকে। একটির বহির্গামী অপরটির অন্তর্গামী হিসেবে কাজ করে।

   ট্রানজিস্টর অ্যাম্পলিফায়ারকে মাইক, ইন্টারকম, অ্যালার্ম, রেডিও ইত্যাদি ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়। 

প্রবাহ বিবর্ধন গুণক : 

   সাধারণ পীঠ বিন্যাসে অন্তর্গামী প্রবাহ হচ্ছে নিঃসারক প্রবাহ IB এবং বহির্গামী প্রবাহ হচ্ছে সংগ্রাহক প্রবাহ Ic। সংগ্রাহক পীঠ ভোল্টেজ VCB ধ্রুব থাকলে Ic ও IE এর অনুপাতকে বলা হয় প্রবাহ বিবর্ধন গুণক α। গাণিতিকভাবে,

α=IclEVcB.. (10.3)

প্রবাহ লাভ

সাধারণ নিঃসারক বিন্যাসের বেলায় অন্তর্গামী প্রবাহ হচ্ছে পীঠ প্রবাহ lB এবং বহির্গামী প্রবাহ হচ্ছে সংগ্রাহক প্রবাহ Ic. ধ্রুব VcE (সংগ্রাহক নিঃসারক ভোল্টেজের) এর বেলায়, Ic এর পরিবর্তন lc ও IB এর পরিবর্তন lB এর অনুপাতকে বলা হয় প্রবাহ লাভ β। সুতরাং

β=lclBVCE

Content added || updated By

সুইচ

ট্রানজিস্টরে পীঠ বা ভূমি বর্তনীতে তড়িৎপ্রবাহ না চললে সংগ্রাহক বর্তনীতে কোনো তড়িৎপ্রবাহ চলে না। সুতরাং ট্রানজিস্টরকে সুইচ হিসাবে ব্যবহার করা যায় যা পীঠ প্রবাহের পরিবর্তন ঘটিয়ে 'অন' ও 'অফ' করা যেতে পারে। ট্রানজিস্টর ব্যবহার করে বিভিন্ন রকম সুইচ তৈরি করা সম্ভব। এগুলো হলো-

(ক) আলোক চালিত সুইচ (Light operated switch)

(খ) তাপ চালিত সুইচ (Heat operated switch)

(গ) শব্দ চালিত সুইচ (Sound operated switch)

যে রকম সুইচ হিসাবে ব্যবহার করা হোক না কেন বিবর্ধকের মতো পীঠ বর্তনীতে তড়িৎ প্রবাহের জন্য এতে একটি বিভব বিভাজক ব্যবহার করা হয়। নিচে একটি আলোক চালিত সুইচের কার্যপ্রণালি দেখানো হলো। এই বর্তনীর (চিত্র ১০.২৮) বাল্বটি আলোর উপস্থিতিতে জ্বলে ওঠে এবং অন্ধকারে নিভে যায়।

চিত্র :১০.২৮ আলোকচালিত সুইচ।

এখানে বিভব বিভাজকে একটি আলোক নির্ভরশীল রোধক (LDR) বা ফটো রেজিস্টর থাকে। অন্ধকারে এই ফটো রেজিস্টরের রোধ হয় প্রায় 1 MS2। এর ফলে উৎস ভোল্টেজের খুব সামান্য ভগ্নাংশ R রোধের দুই প্রান্তে পাওয়া যায় এতে করে পীঠ প্রবাহ খুবই সামান্য হয় যা ট্রানজিস্টরকে অন করতে পারে না। উজ্জ্বল আলোতে ফটো রেজিস্টারের রোধ মাত্র কয়েকশ ও'ম হয় । ফলে R এর দুই প্রান্তের ভোল্টেজ বৃদ্ধি পায় এতে করে পীঠ প্রবাহও বৃদ্ধি পায় ফলে ট্রানজিস্টর অন হয় এবং বাল্ব জ্বলে ওঠে।

  ফটোরেজিস্টর এবং রোধ R এর অবস্থান বিনিময় করলে অন্ধকারে বাল্ব জ্বলে উঠবে এবং আলোতে বাল্ব নিভে যাবে।

Content added || updated By
Promotion